ঢাকার নগরপিতা আতিক ও তাপস

শনিবার সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগের দুই মেয়রপ্রার্থী গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছা বিতরণ করেন। ছবি: সংগৃহীত

রূপান্তর রিপোর্ট: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগরপিতার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস।

শনিবার মধ্যরাতের ফলাফলে জানা যায়, এক লাখ ৮৮ হাজার ৮৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন চার লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।

সবগুলো কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আবদুর রহমান। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫২৫টি ভোট।

চতুর্থ হয়েছেন গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন। মাছ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৭টি ভোট। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পঞ্চম হয়েছেন। লাঙল প্রতীক নিয়ে তিনি পাঁচ হাজার ৫৯৩টি ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. বাহারানে সুলতান বাহার আম প্রতীক নিয়ে তিন হাজার ১৫৫টি ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ডাব প্রতীক নিয়ে দুই হাজার ৪২১টি ভোট পেয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ১২০৫ কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী, তিনি পেয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৮৪১ ভোট। আতিকুল এগিয়ে আছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৯৬১ ভোটে।

এছাড়া ১২০৫ কেন্দ্রে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক কাস্তে প্রতীক নিয়ে সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৭। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন তিন হাজার ৫২৯ ভোট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপির শাহীন খান বাঘ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন এক হাজার ৯১৯‌ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ হাতপাখা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬ হাজার ২৫৮ ভোট।

নির্বাচনে সহিংসতা ও নানা অনিয়ম

এর আগে শনিবার সকাল আটটা থেকে দুই সিটিতে একযোগে চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। কেন্দ্র দখল, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা, এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বহুল প্রত্যাশিত ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এবার প্রথমবারের মতো দুই সিটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েন ভোটাররা। অনেকে কেন্দ্রের সব কটি বুথে গিয়েও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি।

আবার কোথাও কোথাও আঙুলে ছাপ দেয়ার পর নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অনেক ভোটার অভিযোগ করেন।

দেশীয় পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি বিদেশি অনেক কূটনীতিকও ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। বিএনপিসহ অন্যান্য দল নানা অভিযোগ করলেও ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। ভোট উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

এদিকে রাতে দুই সিটির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় হরতালের ঘোষণা দেয় বিএনপি। অন্যদিকে এ হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির দাবি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মারধর করে তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এক কথায় নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, মারধর তো পরের কথা বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্রেই আসেনি। বিএনপি যে অভিযোগ করেছে তা অমূলক ও মিথ্যা। শত বছরের ‘সেরা’ নির্বাচন হয়েছে এটি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সব সংস্থা ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

এর আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল ভোটকেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেয়া, জালভোট দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবলিত চিঠি সিইসিকে দেন। এদিকে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রার্থীরাও ভোটের পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উত্তরে সিপিবির মেয়র প্রার্থী আহম্মদ সাজেদুল হক রুবেল অভিযোগ করেন, ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইসি ব্যর্থ হয়েছে।

দুই সিটির নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, এজেন্ট বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ৪৫টি ঘটনার তথ্য পায় নির্বাচন কমিশনের মনিটরিং সেল। ওই সব ঘটনার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেয়া হলে তারা তাৎক্ষণিক সমাধান করেছেন বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং ও সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সেল।

হামলার শিকার সাংবাদিকরা

স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেই এ সংঘর্ষ হয়। এতে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অনেকেই আহত হন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন গণমাধ্যমকর্মীরাও।

মোহাম্মদপুরে একটি কেন্দ্রে ছবি তুলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর সমর্থকদের হামলায় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। সুমন নামে একজনের অবস্থা গুরুতর। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভোটের পর বিকালে নয়াপল্টনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

SHARE