করোনায় বিশ্ব রাজনীতি

ডা. আবদুন নূর তুষার

আব্দুন নূর তুষার : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছেন। তিনি আমেরিকার করদাতাদের টাকা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া বাৎসরিক চাঁদা আটকে দিয়েছেন। অথচ নিউইয়র্ক শহর ও আমেরিকার করুণ অবস্থার জন্য তাদের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যর্থতা দায়ী।

সারা দুনিয়াতে ওষুধের স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান একটি হলো ইউএসএফডিএ। সারা দুনিয়াতে মহামারি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জ্ঞান ও গবেষণার, নির্দেশনার স্বর্ণমান বা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হলো সিডিসি। তাহলে কেন ট্রাম্পের এই হুংকার?

কারণ হলো তার নিজের নির্বুদ্ধিতা, একগুঁয়েমি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। ট্রাম্প বুঝতে পারছেন না দেশে দেশে ম্যালেরিয়া, এইডস, পোলিও, যক্ষ্মার আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজ আমেরিকানদেরই বেশি রক্ষা করে। কারণ তাদের দেশে পোলিও নেই, যক্ষ্মাও নেই বললেই চলে। টাকার অভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজ ব্যাহত হলে সারা দুনিয়া থেকে যেমন করোনা নিউইয়র্ক দিয়ে আমেরিকাতে ঢুকে পড়েছে, আবার কোনোদিন এসব রোগও ঢুকে পড়বে।

রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা স্বৈরমানসিকতা পোষণ করে। কিন্তু তার নিজের ব্যবস্থাকে সে গণতান্ত্রিক রাখে। এ অনেকটা প্রাচীন রোমের মতো। সিজার রোমে গণতান্ত্রিক কিন্তু সিজার রোমের হয়ে বাকি যতো এলাকা আছে, সেখানকার সম্রাট। ফলে আজ এই নব্য সিজারদের চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে।

দেশে দেশে ব্যর্থরা ধমকাচ্ছেন, জনগণকে সত্য বলছেন না। মেধাবীরা যেসব দেশে আছেন তারা করোনা ভালো সামলাচ্ছেন। লৌহমানবরা দিশা পাচ্ছেন না। করোনা নিয়ন্ত্রণে তাই ইসরাইল আর জার্মানি ১ আর ২। ঔপনিবেশিক ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল পর্যুদস্ত।

অথচ জার্মানি টিকে আছে সদর্পে। আমেরিকা কোনো দেশে চিকিৎসক দল পাঠায় না। যদি না সেখানে যুদ্ধরত আমেরিকান সেনা থাকে। গ অ ঝ ওই নামে একটা টিভি সিরিয়াল বছরের পর বছর ধরে টিভিতে চলেছে সেখানে, অ্যালান অ্যাল্ডা অভিনয় করতেন, যার উপজীব্য ছিলো কোরিয়ান যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমেরিকান সেনাদের ফিল্ড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের কা-কারখানা। আমেরিকা চিরকাল সৈন্য পাঠায়। বোমা পাঠায়। মিসাইল পাঠায় ইউরোপের দেশে দেশে। ইরাক, আফগানিস্তান, হাইতি, পানামা, লিবিয়া, সিরিয়া, সৌদি আরব, মিসর, বলিভিয়া, ইরান, নিকারাগুয়া, চিলি, কিউবা, ভিয়েতনাম, কোরিয়া… আমেরিকার সামরিক স্বাক্ষর দেশে দেশে।

কিউবার নেতাকে মেরে ফেলার জন্য আমেরিকা গুপ্তহত্যার চেষ্টাও করেছিলো। আক্রমণ করিয়েছিলো বে অব পিগসে ভাড়াটে কিউবান দিয়ে। কিন্তু আজ আমেরিকাকে কিউবা পাঠায়, চিকিৎসক।

কে তাহলে পরাশক্তি? করোনার আক্রমণ সহজ করে দিয়েছে পুঁজিবাদের চরিত্র বোঝার ক্লাস। ডলার ছাড়া আমেরিকার আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। সেটাও নাকি চলে গেছে চীনের পকেটে।

করোনা বেশিদিন থাকলে ধমকাধমকির দিন শেষ হয়ে যাবে পরাশক্তিগুলোর। টিকে থাকবে মেধাবীরা। ডারউইনের ভাবনার নতুন প্রকাশ ঘটবে। সারভাইবাল অব দ্যা ফিটেস্ট আর শরীরের নয়, সারভাইবাল অব দ্যা মেরিটোরিয়াস নেশনস দেখতে পাবে বিশ্ব।