স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তনালির একটি রোগ। সেই রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়া অথবা ব্লক হয়ে যাওয়া স্ট্রোকের কারণ। সাধারণত কিছু ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি। অ
নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাই-প্রেসার, হাই-কোলেস্টেরল, ধূমপান, পারিবারিক স্ট্রোকের ইতিহাস, হার্টের অসুখ যেমন- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, রক্তজমাট বাঁধা অসুখ, ক্যান্সার ইত্যাদি আরও অনেক কারণ রয়েছে স্ট্রোকের।
আবার অনেক সময় কোনো পূর্ব রোগ ছাড়াও হঠাৎ করেই হতে পারে স্ট্রোক। এক্ষেত্রে হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া, জন্মগত রক্তনালির গঠনগত সমস্যা, জন্মগত এনজাইমের সমস্যা, মেটাবলিক সমস্যা ইত্যাদি রয়েছে।
তাই শুধু বয়স্কদের নয়, একেবারে তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোক হতে দেখা যায়।
স্ট্রোকের লক্ষণ কী?
সবসময় সবধরনের স্ট্রোকের একই রকম লক্ষণ হয় না। কী ধরনের স্ট্রোক, কী কারণে হল, মস্তিষ্কের কোন অংশে হল তার ওপর ভিত্তি করে লক্ষণও হতে পারে ভিন্ন।
আসুন রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণগুলো কী, জেনে নেই। মতামত দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব মায়ামি নর্থ স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ও পৃথিবী বিখ্যাত স্ট্রোক স্পেশালিস্ট র্যালফ স্যাকো।
১. দেখার সমস্যা যেমন একটা জিনিসকে দুইটা দেখা, চোখে কম দেখা-এই লক্ষণগুলো অনেকে এড়িয়ে যান ক্লান্তি কিংবা বয়সের দোহাই দিয়ে। ডাক্তাররা বলেন, এগুলো স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে।
২. ঘুম থেকে হাত অবশ অবশ লাগে। প্রাথমিকভাবে আমরা ভাবি উল্টোভাবে শুয়ে থাকার কারণে এরকম ঘটে থাকে। এটা অনেকাংশে সত্যি। তবে এই হঠাৎ হাত অবশ হয়ে যাওয়া স্ট্রোক হওয়ার ইঙ্গিতও দিতে পারে।
৩. কথা জড়িয়ে গেলে আমরা বলি যে, অনেকগুলো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়েছি এজন্য এরকম হচ্ছে। ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এরকম হতে পারে। যদি তা নয়, তাহলে কথা জড়িয়ে যাওয়া স্ট্রোকের একটি পূর্বলক্ষণ। এর পাশাপাশি মুখটা যদি হালকা বেঁকে যায় তাহলে অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
৪. হঠাৎ করে শরীর কাপতে শুরু করলে, ঠিকভাবে হাঁটতে অসুবিধা হলে অথবা আকস্মাৎ চোখে অন্ধকার দেখা- এগুলো স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। তবে অতিরিক্ত মদ্যপান করলেও এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
৫. অনেকেই ভুগে থাকেন মাথাব্যথায়। মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এক কথা। নতুবা হঠাৎ করে হওয়া মাথাব্যথাকে স্ট্রোক হওয়ার পূর্বলক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
স্ট্রোক হলে কী করণীয়?
পরিবারের কারো এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ভয় ও উদ্বিগ্ন লাগাটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আপনার প্রথম ও প্রধান করণীয় রোগীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব অ্যাম্বুলেন্স ডাকা এবং হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা।
কোনো ধরনের ওষুধপত্র নিজ থেকে দিবেন না। কারণ স্ট্রোকটি হেমোরেজিক না ইস্কেমিক আপনি জানেন না, ওষুধ প্রদানে উল্টা তার ক্ষতি হতে পারে। মুখে কিছু খাওয়াতে যাবেন না, এমনকি পানিও।
এ খাবার ও পানি তার শ্বাসনালিতে গিয়ে আটকে যেতে পারে ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে অথবা ইনফেকশন করতে পারে, যা এ অবস্থায় তার জন্য খুবই ক্ষতিকর। আর ওই যে ভাইরাল পোস্টে পড়েছেন সুই দিয়ে আঙ্গুল ফুটো করে দেয়া- সেটি ভুলেও করবেন না।
এতে রক্তক্ষরণ থেকে রোগী আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে, ক্ষতের জায়গায় ইনফেকশন হয়ে রক্তে ছড়িয়ে সেপটিসেমিয়া হয়ে যেতে পারে এবং আমাদের শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে স্ট্রোকের ফলাফল আরও খারাপ হতে পারে।
স্ট্রোকের চিকিৎসায় যেই হাড় ছিদ্র করে বারহোল সার্জারির কথা বলা হয়েছে, অনেকে এর সঙ্গে হাতে সুই ফোটানোকে গুলিয়ে ফেলেছে। বারহোল করে মস্তিষ্কের জমাটরক্ত সরানো হয়, যা মস্তিষ্কের একটি অংশে চাপ দিচ্ছে।
হাত, পা, কান ফুটো করে কয়েক লিটার রক্ত বের করেও এ জমাটরক্ত কমানোর কোনো পথ নেই। যদি বের করতেই হয় তবে মাথার হাড়ই ফুটো করতে হবে এবং এ ডিসিশন একমাত্র আপনার চিকিৎসকই দিতে পারেন।