যেভাবে রাজনীতিতে উত্থান মোদির

নরেন্দ্র মোদী ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী। এই রাজনীতিবিদ ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে জয়লাভ লাভ করেন।

জন্ম, বিয়ে ও শিক্ষা

নরেন্দ মোদী ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাট রাজ্যের মহেসানা জেলার বড়নগরে ঘাঞ্চী তেলী সম্প্রদায়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তার বাবা দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদী ও মা হীরাবেন মোদী। বড়নগর রেলস্টেশনে তিনি তার বাবাকে চা বিক্রি করতে সহায়তা করতেন। যাত্রীদের কাছে হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি করতেন।

ছোট বেলায় স্বামী বিবেকানন্দের জীবন তাকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করে। ৮ বছর বয়সে মোদী রাজনৈতিক গুরু লক্ষ্মণরাও ইনামদারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগদান করেন।

স্কুলে পড়ার সময়ই মোদীর অর্চনার বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। তিনি প্রায়ই পরিবার থেকে বেরিয়ে দূরে নির্জন স্থানে গিয়ে উপাসনা করতেন। কখনো তাঁকে দেখা যেত হিমালয়ে গিয়ে উপাসনা করতে।

ঘাঞ্চী সম্প্রদায়ের রীতি অনুসারে মোদীর বাবা মা কৈশোরে যশোদাবেন চিমনলালের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেন। তবে খুব কম সময় তারা একসঙ্গে সময় অতিবাহিত করেন।

মোদী পরিব্রাজকের জীবন অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিলে ১৯৬৭ সালে চূড়ান্তভাবে পরিবারের সঙ্গ ত্যাগ করেন তিনি। বাড়ি ছেড়ে ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েন। দু’বছর ধরে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন।

চারটি নির্বাচনী প্রচারে মোদী নিজের বিবাহিত জীবন নিয়ে নীরবতা অবলম্বন করলেও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তিনি যশোদাবেনকে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেন।

জানা যায় ১৭ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি রাজকোট শহরের রামকৃষ্ণ মিশন ও তারপর বেলুড় মঠ যাত্রা করেন। এরপর তিনি আলমোড়া শহরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে যোগ দেন। দুই বছর পরে তিনি বাড়ি ফিরে এসে আমেদাবাদ শহরে নিজের কাকার চায়ের দোকানে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৭০ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন পূর্ণসময়ের প্রচারক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগ পর্জন্ত ক্যান্টিনের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।

এই সময় তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

রাজনৈতিক জীবন

ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা করার জারির পর রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে ঢুকাতে থাকেন। সে সময় দিল্লি থেকে গুজরাটে ফেরেন মোদী। মাঝে মাঝেই লাপাত্তা হয়ে যেতেন। তবে সুযোগ পেলেই ইন্দিরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করতেন বিভিন্ন পুস্তিকা।

১৯৮৭-৮৮ সালে তিনি বিজেপির গুজরাট ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। মূলত, এর মধ্য দিয়েই মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি।

দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে ধীরে ধীরে বিজেপিতে নিজের অবস্থান পোক্ত হয়। ১৯৯০ সালে তিনি আদভানির নেতৃত্বে সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রার বড় ভূমিকায় ছিলেন।

১৯৯২ সালে গুজরাট বিজেপিতে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েন মোদী। কেশুবাই প্যাটেল, শংকরসিংহ বাঘেলা কিংবা কাশীরাম রানার মতো নেতারা মোদীর উত্থানে ক্ষুব্ধ হন। এ সময়ে জ্যেষ্ঠদের ডিঙিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কেশুবাই প্যাটেলের সঙ্গে বিশ্বস্ততা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে।

২০০২ সালের হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময়টা ছিল মোদীর উত্থানের সবচেয়ে বড় অনুঘটক। সে সময়ে হিন্দু দাঙ্গাবাজদের উসকে দিয়ে তিন হাজার মুসলমানকে হত্যা ষড়যন্ত্রে মোদিকে জড়িয়ে অভিযোগ থাকলেও তাঁকে বাঁচিয়ে দেন আদভানি। তবু বিভিন্ন মহল থেকে মোদির পদত্যাগের দাবি ওঠে। কিন্তু ২০০২ সালে গুজরাটের নির্বাচনে মোদীর জয় তাঁকে আবারও আলোচনায় আনে। মোদীর রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘোরে তখন থেকেই।

২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রি পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৯ সালের ৩০ মে শপথ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের কার্যকাল শুরু হয়।

SHARE