প্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করলে সরকারই ফেঁসে যাবেঃ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান পরিষদ নেতা কাজল দেবনাথ

বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া প্রিয়া সাহার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ। তিনি বলেছেন যে, প্রিয়া সাহার বক্তব্য ঠিকই আছে।

সরকার এটাকে রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামল করতে পারে। তবে বিচারে গেলে আমি তো মনে করি দুর্গন্ধ আরো বাড়বে (সরকার ঝামেলায় পড়বে)। কিন্তু কেন দুর্ঘন্ধ বাড়বে তার কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দিতে চাননি কাজল দেবনাথ।”

জার্মানির গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন প্রিয়া সাহা শব্দ বলতে মিসটেক করেছেন।

সম্প্রতি প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান গুম (ডিসঅ্যাপিয়ার্ড) হয়ে গেছে। এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনও বিচার হয়নি।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ সরকারের মন্ত্রীরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে ‘দেশদ্রোহী’ অভিহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।

কাজল দেবনাথ ডয়েচে ভেলের কাছে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রিয়া বলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডিসঅ্যাপিয়ার্ড। ডিসঅ্যাপিয়ার্ড শব্দটির এখন সারা বিশ্বে বাংলা অর্থ বিচার বহির্ভূত গুম। এটা হবে মিসিং পপুলেশন।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে যদি আমরা হিসাব করি তাহলে এই ভূখণ্ড থেকে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ হারিয়ে গেছে। এটা কিন্তু অংকের কাছাকাছি। কারণ ওই সময়ে হিন্দু ছিলো মোট জনসংখ্যার ২৯ ভাগ। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে তা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ ভাগ। তাহলে ২০ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী মিসিং।

আবার সে বলেছে এখন ১৮ মিলিয়ন হিন্দু আছে। এটাও কাছাকাছি। আমরা বলি ১ কোটি ৫০ লাখ, সে বলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ। ১৯৪৭ সাল থেকে না বলায় বিভ্রান্তি হয়েছে।

বাড়ি পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে বলেছে আমরা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এটা ফ্যাক্ট। আড়াই মাস আগে তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জমিজমা কেড়ে নিয়েছে। সে এটা নিয়ে হইচই করেছে। অনেকের কাছে গিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনজনের নাম চেয়েছিল। আমার হিন্দু , বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান এই তিন সম্প্রদায় থেকে তিন জনের নাম দিই। তারা হলেন: নির্মল রোজরিও, নির্মল চ্যাটার্জি এবং সুজিত বড়ুয়। এখন প্রিয়া সাহা কি করে গেলেন সেটা আমরা জানি না। সে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক, তবে আমাদের নমিনেটেড না।

কাজল দেবনাথ বলেন, এরপর কথা হলো ১৩৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন। ৪০ জন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন। আমাদের ফরেন মিনিস্টারও ছিলেন। তিনি আমাদের দলনেতা। তাদের সাথে না থেকে প্রিয়া সাহা কিভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৭ জনের সাথে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সেখানে ঢুকলেন এটা বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭ জনের সাথে একান্তে কথা বলেছেন। সেই ফুটেজ কিভাবে বাইরে এলো? এটা ট্রাম্পের অফিস যদি করে থাকে তাহলে তার একটা চেইন আছে। সেই চেইনে বাংলাদেশ কেন নেই।

তিনি আরো বলেন, তিনি যে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন এটা যৌক্তিক নয়। এটা আমরা করতে পারি না। তবে তারা কেউই এখানো দেশে ফেরেননি। ফিরলে পুরো বিষয়টি জেনে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব।

তবে প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাকে ‘বাড়াবাড়ি’ মনে করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, তিনি (প্রিয়া সাহা) হয়তো ডিসপ্লেসড বলতে গিয়ে ডিসঅ্যাপিয়ার্ড বলেছেন। এধরনের ভুল আমাদেরও হতে পারে। তাই এটা নিয়ে এখন যা হচ্ছে তা আমার কাছে অনেক বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের রিঅ্যাকশনগুলো হঠকারিতার শামিল হয়ে যাচ্ছে। এত বেশি রিঅ্যাকশন দেখানোর কিছু নেই।

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজল দেবনাথ বলেন, মামলাতো করতেই পারে। রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামল করতে পারে। তবে বিচারে গেলে আমি তো মনে করি দুর্গন্ধ আরো বাড়বে। কিন্তু কেন দুর্ঘন্ধ বাড়বে তার কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দিতে চাননি কাজল দেবনাথ।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ করে সমালোচিত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা তার অবস্থান ব্যক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন।

নিজের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘শার’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ৩৫ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

প্রিয়া সাহা জানান, তিনি ভালো নেই, তার পরিবার হু*কিতে আছেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাননি বলে জানান তিনি।

ট্রাম্পকে বলা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনসংখ্যা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি তার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন। ভিডিওতে ওপাশ থেকে লাইভে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় প্রিয়া সাহা জানান, গত মাসের ১৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ইমেইল করা হয়। সেই ইমেইল পেয়ে তিনি ১৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে যান।

কেমন আছেন সেই প্রশ্নে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি ভালো নেই। আপনারা দেশে আছেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন পরিস্থিতি কোথায় যাচ্ছে। আমার পরিবার ভীষণ সমস্যায় আছে। গতকাল আমার বাসার তালা ভাঙতে চেষ্টা করা হয়েছে। বাসার সামনে মিছিল করা হয়েছে।

হু*কি দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমার পরিবারের ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কথা বলেছি আমি, তারা আমার ছবি ছাপাতে পারতো। এর মাধ্যমে পরিবারের সবার জীবনকে বিপন্ন করা হয়েছে। আমার পরিবারের কেউ আমার কাজের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।’

ভিডিও বার্তায় তিনি নির্বাচনপরবর্তী সহিং*তায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যা*ন করা হয় তা উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পকে আপনি কেন এমন অভিযোগ দিলেন সেই প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া বলেন, ‘এই কথাগুলো মাননীয় শেখ হাসিনার কথা। মাননীয় শেখ হাসিনা ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও ওপর নির্বাচনোত্তর চরম নির্যা*ন চলছিল ৯৪ দিন ধরে। আজকের শেখ হাসিনা তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী।

তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে, তার অনুসরণ করে এসব কথা বলেছি। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় বলা যায়, এটা আমি তার কাছে শিখেছি।’

ট্রাম্পকে বলা তার ৩৭ মিলিয়ন গুম হয়ে যাওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক।

এ বিষয়ে প্রিয়া যে ব্যাখ্যা দেন, ‘২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ের সংখ্যালঘু যে চাপ্টার রয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলো লেখা রয়েছে। প্রতি বছর সরকার যে আদমশুমারি বের করে সেই রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় জনসংখ্যা (সংখ্যালঘু) ছিল ২৯ দশমিক ৭ ভাগ।

আর এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হচ্ছে ৯ দশমিক ৭ ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়নের মতো। তো সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা একইভাবে বৃদ্ধি পায়নি। ফলে আমি ক্রমাগতভাবে হারিয়ে গেছে বলে যে সংখ্যা বলেছি সেটা মিলে যায়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবুল বারকাত গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় উনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। আমি ২০১১ সালে স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছিলাম এ কারণে এ বিষয়ে অবহিত।’

তিনি উদাহরণ দেন, ‘আমার নিজের গ্রামের কথা বলেছি। সেখানে ২০০৪ সালে ৪০টি পরিবার ছিল। এখন ১৩টি পরিবার আছে। এই মানুষগুলো কোথায় গেল, কোথায় আছে সেটা রাষ্ট্রের দেখার কথা।’

তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিতে চাইনি। পিরোজপুরের আমার গ্রামে গেলে হারিয়ে যাওয়া পরিবারের বসতভিটা দেখতে পাবেন।

এমন জবাবে সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুরা হারিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদ তো কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেখিনি। কোনো পত্রিকাতে এসেছে কিনা আমরা জানি না।

জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, এমন সংবাদ আপনারা নিয়মিত প্রচার করেছেন। গত মাসেও সাতক্ষীরা থেকে কয়েকটি পরিবার চলে গেছে সে সংক্রান্ত খবর অনেক পত্রপত্রিকায় এসেছে। দেশ থেকে কোনো পরিবার উচ্ছেদ গলে গণমাধ্যম নিয়মিতই সে খবর প্রকাশ করছে।

কেন ট্রাম্পের কাছে এসব পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৃথিবীর মধ্যে সফলতা দেখিয়েছে।

আমি চেয়েছি বা যে জন্য বলেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনও কাজ করে যাতে কোনোভাবেই মৌলবাদের উত্থান না ঘটে। তাই আমি বলেছি। সরকারের কাজটি শক্তিশালী করার জন্য এই কথাগুলো বলেছি।’

সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার যখন প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন তখন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে না বরং আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে সঙ্গে নিয়ে এই মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।’

তিনি বলেন, মুসলমান হিন্দুদের শত্রু না, মুসলমান সম্প্রদায়ের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষই অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে একসঙ্গে থাকে কিন্তু কিছু দুষ্টু লোক আছে যারা এই ঘটনা ঘটায়।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যা*নের যে অভিযোগ প্রিয়া সাহা করেছেন সেটিকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ হিসেবে দেখছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি এটিকে রাষ্ট্রদোহিতা মনে করেন না।

রোববার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন অবস্থান ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যা*নের বিষয়ে ট্রাম্পকে যে তথ্যগুলো প্রিয়া সাহা দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, বিএনপি-জামায়াতের সময় ছাড়া বাংলাদেশে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এটা তিনি ব্যক্তিগত ঈর্ষা চরিতার্থের জন্য করেছেন। এত ছোট্ট ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে গেছে, তা মনে করি না।

এদিকে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ঢাকায় দুটি মামলা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটেও পৃথক মামলা হয়েছে। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপী*নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এর পর তিনি বলেন, এখন সেখানে এক কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।

ভিডিওতে দেখা গেছে, একপর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীল হয়ে ওই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। কারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।’

প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বহু উদাহরণ সোশ্যাল মিডিয়া তুলে ধরছেন নেটিজেনরা।

‘৭১-এর চেতনায় গঠিত যে দেশে সব ধর্মের নাগরিক সমান অধিকারে সহাবস্থান করে বিশ্বে অসাম্প্রদায়িকতার মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে সেই দেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার এমন বক্তব্য কখনই মেনে নেয়ার মতো নয় বলেও অভিমত দিচ্ছেন সচেতনরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমনের ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলার আবেদন খারিজ করেছেন আদালত।

আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন।

পেনাল কোডের ১২৩ (এ), ১২৪ (এ) ও ৫০০ ধারায় মামলাটি আমলে নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার সুমন আদালতে আবেদন করেন। পরে দুপুরে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলা খারিজের আদেশ দেন আদালত।

গত ১৬ জুলাই মর্কিন প্রেসিেিডন্টের হোয়াইট হাউসে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। সেখানে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

সে সময় প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’

এর পর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’

ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতির সঙ্গে এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। প্রিয়া সাহা আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার কথোপকথন প্রকাশ পেলে তা নিয়ে দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

হিন্দুদেরমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ করা প্রিয়া সাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার দুপুরে একথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এর আগে রোববার সকালে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুটি মামলা করা হয়েছে।

ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। আর অপর মামলাটি করেছেন ঢাকা বারের আইনজীবী সমিতির বর্তমান কার্যকরী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম খলিল।

এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রিয়া সাহা কেন এমন কাজ করেছেন এ বিষয়ে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত। আপাতত তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার দরকার নাই।

জনগণকে যানজট থেকে স্বস্তি দিতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, বড় বড় প্রজেক্টের কারণে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ সহনীয় করার চেষ্টা চলছে। প্রজেক্ট শেষ হলে স্বস্তি মিলবে।

এ সময় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ম্যাস রেপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
!

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেত্রী প্রিয়া সাহা গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তথা ইসলামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও জমিদখলের অভিযোগ করেছেন।

প্রিয়া সাহার অভিযোগ-ইসলামী মৌলবাদীরা দেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দুকে বের করে দিয়েছে। তাদের জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, তার অভিযোগ শুনে প্রেসিডেন্ট খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আর এমন অভিযোগ শুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্ষুব্ধ হওয়ারই কথা।

প্রিয়া সাহার এই বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশের পরই এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। নড়েচড়ে বসেছে সরকারও। একথায় সবাই প্রিয়া সাহার দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই দিন ধরে শুধু প্রিয়া সাহাকে নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। প্রিয়া সাহা এই দুঃসাহস কোথায় থেকে পেল এমন প্রশ্নই ঘুরেফিরে তুলছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।

এদিকে, সরকারের মন্ত্রীরাও প্রিয়া সাহার এই অভিযোগকে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন। প্রিয়ার বক্তব্যকে দেশদ্রোহী বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে তথা মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ করে প্রিয়া সাহা যে গর্হিত অপরাধ করেছেন তাতে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। তার এই বক্তব্যে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এমনকি এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তথা এদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রও বটে।

এখন প্রশ্ন হলো-প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপপ্রচার করার সাহসটা কোথায় পেল? বিদেশে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কি শুধু প্রিয়া সাহাই করেছেন নাকি আগেও এমন হয়েছে? বিগত দিনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এমন অপপ্রচারের সঙ্গে এক সময় শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারাও জড়িত ছিলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে দুটি এজেন্ডা নিয়েই মাঠ গরম করতে দেখা যায়। তারা সরকারে থাকলে বিরোধী দলকে আর বিরোধী দলে থাকলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি বিষয়ে বেশি প্রচারণা চালিয়ে থাকে।

এটি হলো হলো সংখ্যালঘু নির্যাতন। দলটি অতিমাত্রায় ভারতঘেঁষা হওয়ার কারণে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও তাদের একটু বেশি ভালবাসে। আর এ সুযোগটাকেই আওয়ামী লীগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ও আগুন দিয়ে মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা পুড়িয়ে দিয়ে পরে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালায়।

বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা-ভাংচুর ও আগুন দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে তদন্তের পর দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের লোকেরাই জড়িত ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে গিয়ে তাদের জন্য হিতে-বিপরীত হয়েছে।

বিশেষ করে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন শেখ হাসিনা। ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোতেই শুধু অভিযোগ দেননি। বিদেশে গিয়েই শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশ এখন তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে খালেদা জিয়া দেশকে আফগানিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে। তাদের জমি দখল করে নিচ্ছে। তারা এখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রচারের কাজে শেখ হাসিনা তখন আওয়ামী পন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত শাহরিয়ার কবিরসহ অন্যদেরকেও ব্যবহার করেছেন।

আর সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল-বিদেশিদের কাছে করা এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে শেখ হাসিনা তার সোনার ছেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর করিয়েছে। নারীদের ওপর নির্যাতন করিয়েছে। আগুন দিয়ে হিন্দুতের বাড়িঘর পুড়ে এগুলোর ফুটেজ ও ছবি বিদেশিদের হাতে দিয়েছে।

এখানে পাঠকদের জন্য সেই সময়কার অল্প কিছু ঘটনা তুলে ধরছি- ১৪ অক্টোবর ২০০১ তারিখে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের নিশিপাড়ায় কালিমন্দির ভাঙ্গা হয়। আওয়ামী লীগের লোকজন এর দায় চাপায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর।

পরে পুলিশ রিপোর্টে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাই এর সাথে জড়িত ছিল। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর পুরো এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। গা-ঢাকা দেয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। আবার অনেকে আপস করার জন্য ধরনা দেয় পুলিশের কাছে।

৮ অক্টোবর ২০০১ তারিখে খুলনার পাইকগাছা থানার কাশিমনগর গ্রামের আলোপাড়া পূজামণ্ডপ ভাংচুরের কারণে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়।

১২ অক্টোবর ২০০১ তারিখে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে হিন্দু-বদ্ধ-খৃস্টান ঐক্যপরিষদের উদ্যোগে মাইনোরিটিস সংখ্যালঘু নির্যাতন: কারণ ও প্রতিকার শীর্ষক এক সেমিনারে সংখ্যালঘু নেতারাই অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এরা সংখ্যালঘুদের উস্কানি দিয়ে তাদের বিপাকে ফেলে তা থেকে ফায়দা লুটতে চান।

আর সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পিত কাহিনী তৈরির মূলহোতা ছিল ঘাদানিক নেতা শাহরিয়ার কবির। শাহরিয়ার কবির ১১ নবেম্বর ২০০১ তারিখে ভারতে গিয়ে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে হিন্দুদের দিয়ে প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এগুলোকে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া।

২৪ নভেম্বর ২০০১ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে আপত্তিকর ক্যাসেটসহ শাহরিয়ার কবির আটক হয়। শাহরিয়ার কবিরের কাছ থেকে জব্ধ করা ক্যাসেটের দৃশ্য দেখে গোয়েন্দারাও হতবাক হয়ে পড়েছিল। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এর পরই মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে জোট সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আওয়ামী লীগ যে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করেছিল তা ফাঁস হয়ে পড়ে।

এছাড়া সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় ছিল-বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় অফিসে লঙ্গরখানা খুলে সারা দেশের সংখ্যালঘুদের এখানে এসে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তাদের এই লঙ্গরখানায় যারা আশ্রয় নিয়েছিল তারা কেউ নির্যাতিত ছিল না।

বস্তির বাসিন্দা, ফুটপাত ও পার্কে অবস্থানকারীরা খাওয়ার জন্য তাদের এই কথিত লঙ্গরখানায় আশ্রয় নিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো আওয়ামী লীগের এই লঙ্গরখানায় অবস্থানকারীদের অর্ধেকই ছিল মুসলমান ভিক্ষুক।

ঢাকার বাইরে থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতিত কোন লোক না আসায় অবস্থা বেগতিক দেখে এক পর্যায়ে তারা লঙ্গরখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ তারা তুলছিল তা ছিল সম্পুর্ণ মিথ্যা।

এসব ঘটনা থেকে নিশ্চয় প্রমাণিত হয় যে, বিদেশ গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সূচনা মূলত করেছিলেন শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মূলত শেখ হাসিনাই শুরু করেছিলেন।

এদেশের ইসলামী দলগুলোকে নির্মূল করার জন্য তাদেরকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে প্রমাণ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যত লবিং করার দরকার ছিল শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয় সবই করেছেন। এখন প্রিয়া সাহা শুধু তাদের সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করছেন মাত্র।

প্রথমে তারা আপনাকে মসজিদ, মাদরাসা, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক বিরোধী আন্দোলনে নামালো।

এরপর যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ইসলামকে গালাগালি শুরু করালো।

জাতিকে পরিস্কার দুই ভাগে বিভাজন করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মীয় বিদ্বেষ, জাতিগত ও ধর্মীয় ঘৃণার প্রসার-প্রচারনা শুরু করালো।

বিভক্ত জাতির গণতন্ত্রের হত্যার জন্য আপনাকে চিরস্থায়ী ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে ৫ই জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচন করালো।

যুদ্ধাপরাধী ও মৌলবাদী ইস্যুর পর নতুন এক জঙ্গি ইস্যু তৈরি করে দেশ-বিদেশে রাষ্ট্রকে উগ্র মুসলিম জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা দেয়া হলো।

বিনিময়ে মিডনাইট ভোটের সরকার উপহার দিলো।

প্রতিদান রক্ষা করতে গিয়ে আপনি ট্রানজিট, বানিজ্য, রেমিটেন্স, বন্দর থেকে শুরু করে সবকিছু এমনিভাবেই উজাড় করে দিলেন যে, শেষ পর্যন্ত আপনাকেই বলতে হলো- ‘ভারতকে যা দিয়েছি আজীবন মনে রাখবে।’

রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টর থেকে শুরু করে আপনার নিরাপত্তার ভার পর্যন্ত তাদের হাতে তুলে দিয়ে আপনার আনুগত্য প্রদর্শনে কোন কমতিই করলেন না।

গণহারে গুম, মামলা চালালেন আপনার সমালোচকদের বিরুদ্ধে।

আপনার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত গোটা জাতি নিরবে সহ্য করেছে তাদের সর্বময় দাপট।

দুধ কলা দিয়ে পুষে আপনার রাজনৈতিক বিরোধী ও সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাদেরকে ব্যবহার করেছেন। তার জন্য তাদেরকে যেমন দিয়েছেন সর্বময় ক্ষমতা, তেমনি দিয়েছেন সর্বময় দায়মুক্তি।

পীযূষরা যখন দাড়ি টুপি ও টাখনুর উপরে কাপড় পড়াকে জঙ্গি বলে একযোগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আপনি তখন নিশ্চুপ!

ইকসন যখন তাদের ধর্মীয় বাণী পড়িয়ে স্কুলের মুসলিম বাচ্চাদের প্রসাদ খাওয়ালো। আপনি তখন নিশ্চুপ!

যখনই তারা কোন অপরাধ করেছে আপনার সাজানো প্রশাসন ও মিডিয়া দিয়ে সেটাকে মিথ্যা প্রমান করে উল্টা সেই দায়ভার সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠের সেন্টিমেন্টকে ধরে রাখতে আপনাকে মদিনা সনদে দেশ চালানো, ওলী-আউলিয়া, কওমী জননী, তাহাজ্জুদ, সকালে কোরআন না পড়ে কাজ শুরু না করা, আপনার দোয়ায় খেলায় জয়ী হওয়া… ইত্যকার নাটক করতে হয়েছে।

দিনশেষে আপনি শুধু ম্যানেজারই রয়ে গেলেন, মালিকানা পেলেন না! কারন, মালিককে দেয়ার মত আর কিছুই যখন অবশিষ্ট থাকে না, ম্যানেজারের তখন আজকের মত এই অবস্থাতেই পড়তে হয়।

পুনশ্চ- হ্যাঁ, আপনার অন্ধ লোকদেখানো গুণগ্রাহীরা আমার এই বক্তব্য দেখে আমাকে আবারও রাজাকার, রাষ্ট্রদ্রোহী বলবে। আপনারা তো পারেন শুধু শহীদুল আলম, মাহমুদুর রহমান, মাহফুজ আনাম, মাহমুদুর রহমান মান্না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর তুহিন মালিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করতে!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান গুমের অভিযোগের বিষয়ে প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তিনি বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মচারী বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রিয়া সাহার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় চরবানিরীর মাটিভাঙ্গাতে। তার স্বামীর নাম মলয় সাহা। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়। দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনার সুবাদে প্রিয়া সাহা প্রায়ই সেদেশে যাতায়াত করেন।

প্রিয়া সাহার এই মিথ্যা অভিযোগটি আমেরিকায় থাকা বাংলাদেশের সাধারণ মুসলমানদের আরো নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

এনিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল নিজের ফেসবুক পাতায় লেখেন, ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে একজন ভদ্রমহিলা (কেউ কেউ বলেছেন তার নাম প্রিয়া সাহা) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেছেন বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ‘ডিসএপিয়ার’ (অদৃশ্য/দেশত্যাগে বাধ্য?) হয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন মুসলিম মৌলবাদীরা এটা করেছে এবং তারা সবসময় রাজনৈতিক শেল্টার পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ অবিশ্বাস্য। এটি যদি সত্যি না হয় তাহলে তা দুঃখজনক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি উস্কানিমূলক। সরকারের বিষয়টি সিরিয়াসলি নেয়া উচিত। কারন এতে দেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হতে পারে। এ বক্তব্য এমনকি ট্রাম্পের দেশে বাংলাদেশের সাধারন মুসলমানদের আরো নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় ফেলতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বিভিন্ন ধর্মের ২৭ জনকে মানুষকে ডেকেছিলেন তাদের বৈষম্যের বিভিন্ন কথা শোনার জন্য। সেখানে মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ইয়েমেন, চায়না, কিউবা, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, সুদান, আফগানিস্তান, নর্থ কোড়িয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান জার্মানি, বাংলাদেশ সহ আরো কয়েকটি দেশের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তাদের প্রত্যেকেই ট্রাম্পকে তাদের নিজ দেশের বৈষম্যের কথা বলছিলেন। সেখানেই বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পান বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ- খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে। তিনি ট্রাম্পকে বলেন, তার জমি জমা কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশি মুসলিমরা, তার ঘরবাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।

ওভাল অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে। এখনো সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে চাই না। আমি আমার ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, আমার ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেসবের কোনো বিচার নেই।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেন কারা এসব করছে? বাংলাদেশি ওই নারী বলেন, ‘সবসময় উগ্রবাদী মুসলিমরা এই কাজ করছে। সবসময় তারা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এই কাজ করে।’

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার বিভিন্ন ধর্মের ২৭ জনকে মানুষকে ডেকেছিলেন তাদের দুর্ভোগের কথা শোনার জন্য। সেখানে মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ইয়েমেন, চায়না, কিউবা, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, সুদান, আফগানিস্তান, নর্থ কোড়িয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান জার্মানি, বাংলাদেশ সহ আরো কয়েকটি দেশের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তাদের প্রত্যেকেই ট্রাম্পকে তাদের নিজ দেশের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন। সেখানেই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রিয়া সাহা নামের নারী ট্রাম্পকে বলেন, তার জমি জমা কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশি মুসলিমরা, তার ঘরবাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।

ওভাল অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রিয়া সাহা নামের নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭০ লাখ ) হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে। এখনও সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ রয়েছে।

দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে চাই না। আমি আমার ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, আমার ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেসবের কোনো বিচার নেই।’

ওই নারীর এমন বক্তব্যের পর ট্রাম্প বলেন, “কারা জমি দখল করেছে, কারা ঘরবাড়ি দখল করেছে? তখন প্রিয়া সাহা নামের এই নারী বলেন, “মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সবসময়।”

শান্তি ও সম্প্রীতির সোনার বাংলাদেশকে কলুষিত করতে বিশ্ব মোড়ল ট্রাম্পের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করে সাহায্য প্রার্থনা করায় এই মিথ্যাবাদী ও উগ্র হিন্দু নারী পরিচয়য় এবং তার ক্ষমতার উৎস নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে! কী মতলব এই নারীর? সম্প্রীতি ও ভালবাসার সোনার বাংলাদেশকে এরা কেন কলুষিত করতে চায়? কে এই নারী?
কে এই প্রিয়া সাহা?

মিথ্যা অভিযোগকারী এই মহিলাটির নাম প্রিয়া সাহা। সে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার গ্রামের বাড়িঃ চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর। তাকে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও তাদের বুদ্ধিজীবী এবং শাহাবাগী ও নাস্তিকদের সাথে বিভিন্ন সভা সেমিনারে প্রায়ই দেখা যেত। এই নারী সুলতানা কামাল, খুশি কবির, রানা দাস গুপ্ত ও পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সহযোগী।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, রাশেদ খান মেনন, সুলতানা কামাল, শ্যমল দত্তের সাথে মিথ্যাবাদী উগ্র হিন্দু প্রিয় সাহা ( সবার বামে)

এরাই আসল দেশদ্রোহী, দাঙ্গাবাজ যারা বহির্বিশ্বে নিজ দেশকে বাজে ভাবে উপস্থান করে রাজনৈতিক আশ্রয় (এসাইলাম ) নেওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রিয় সাহার ক্ষমতার উৎস কি?

প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, রোকেয়া হলে থাকতেন। এখন একটি এনজিও আছে ওনার। বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর।

প্রিয় সাহাকে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও তাদের বুদ্ধিজীবী এবং শাহাবাগী ও নাস্তিকদের সাথে বিভিন্ন সভা সেমিনারে প্রায়ই দেখা যেত। সেই ধরনের কিছু সংগ্রহীত ছবি সহ আরও তথ্য এখানে উল্লেখ করা হলঃ
আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা অপু উকিলের সাথে সেই মিথ্যাবাদী উগ্র হিন্দু প্রিয়া সাহা

প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সহকারী পরিচালক। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে মলয় সাহার দুর্নীতির টাকায় আমেরিকায় বসবাস করছেন, কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহাকে দুদকের অফিসিয়াল গাড়ি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে পৌছে দেন তার স্বামী, দুদকের সহকারী পরিচালক মলয় সাহা। সকালে এয়ারপোর্ট পৌছে ফ্লাইট মিস করেন প্রিয়া, তারপর সেদিন রাতেই আরেকটি ফ্লাইটে তিনি আমেরিকায় রওনা হন, তার বিদায় মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির।

প্রিয়া সাহার এই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হওয়ায় তার স্বামী মলয় সাহাকে অতিদ্রুত চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে দেশপ্রেমী জনতা। ভুলে গেলে চলবে না তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে অলরেডি অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন বাংলাদেশের।

ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎকারে প্রিয়া সাহা আরও বলেন, “এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমিজমাও দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এর কোন বিচার হয়নি।”
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মিথ্যাবাদী উগ্র হিন্দু প্রিয়া সাহা ( সবার মাঝে)

তবে ট্রাম্পের কাছে করা ওই নারীর এমন নালিশের সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন এমন ঘটনার কোন সত্যতাই পাওয়া যায়নি। বরং এদেশে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সম্প্রীতি রয়েছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করেন।

বাংলাদেশি পরিচয় দেয়া ওই নারীর এমন বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমেও ঝড় বয়ে গেছে। অনেকেই বলছেন, ওই নারী এমন বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। অনেকেই বলছেন, এমন মিথ্যা কথা তিনি কীভাবে বললেন। সামাজিক মাধ্যমে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এটা দেখি ঘষেটি বেগম।” অপর একজন লিখেছেন, “এটা কাদের চাল হতে পারে বুঝলাম না।”

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমার চোখে কি দেখলাম আর কি শুনলাম। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। মানুষ এতটা অকৃতজ্ঞ, বেইমান, রাজাকার, নিকৃষ্ট আর দেশদ্রোহী কেমনে হয়? আমাদের দেশে কোন দিন শুনি নাই জোর করে কাউকে কালেমা বা গরুর গোস্তো খাওয়াতে।

মুসলমানদের কাছে অমুসলিমরা যতটা শান্তিতে আছে সেটা অমুসলিম দেশেও নাই। ইন্ডিয়া একটা হিন্দু দেশ সেখানেও দলিত হিন্দুদের পিটায়া মারে, মন্দিরে ঢুকতে দেয় না। সাইকেল পর্যন্ত চালাতে পারে না। এরা আমাদের দেশকে নিয়া কি ষড়যন্ত্র করে?’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ব্যানারে ইসলামবিদ্বেষী নারাবাদীদের সাথে মিথ্যাবাদী উগ্র হিন্দু প্রিয়া সাহা ( সবার মাঝে)

ওই নারীর বক্তব্যের পর দেশের এবং প্রবাসের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। রীতিমতো দেশের ও প্রবাসের বাংলাদেশী নেটিজেনরা ওই নারীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তারা ট্রাম্পকে হ্যাশ ট্যাগ, মেনশন করে জানাচ্ছেন ওই মহিলা মিথ্যে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গণমাধ্যম পুরো অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ করেছে। যার কারণে ভিডিওটি সকলের সামনে চলে আসে।

SHARE