কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।  কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি-এ নিয়ে বিচারাঙ্গনে নানা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে।

প্রথা অনুযায়ী মাহমুদ হোসেনের পরবর্তী সিনিয়র বিচারপতিই প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হবে কি হবে না-সেটিই এখন প্রশ্ন।

কারণ এর আগে জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দৃষ্টান্ত এদেশে রয়েছে। সাতবার এ ঘটনা ঘটেছে। যদিও সংবিধানে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া উচিত। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তার পরের অবস্থানে রয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

এই চারজনের মধ্যে একজন হতে পারেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি। তবে তাদের মধ্যে দুজনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছেন। তারা হলেন-বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

তবে আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগের চার বিচারপতির তিনজনেরই অবসরের মেয়াদ ২০২৩ সালের মধ্যে।

সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়। সে হিসেবে বিচারপতি ইমান আলী অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলে তার মেয়াদকাল হবে এক বছর।

আর বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নিয়োগ পেলে তার প্রধান বিচারপতি হিসেবে মেয়াদকাল হবে দেড় বছরের বেশি। কারণ তার মেয়াদকাল ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এছাড়া বিচারপতি নুরুজ্জামান ননী অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ১ জুলাই। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অবসরে যাবেন ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি।

বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর। সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় মাহমুদ হোসেনকে ইতোমধ্যে বিদায়ী সংবর্ধনো দেওয়া হয়েছে।  সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী অংশ ওই অনুষ্ঠান বর্জন করে।

রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে তিনি যে কোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দিতে পারেন।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা উচিত নয় বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রহুল কুদ্দুস কাজল মনে করেন, বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া দরকার।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পদত্যাগ করলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পদে থাকাকালীন প্রধান বিচারপতি হিসাবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নিয়োগ চূড়ান্ত করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।

এ নিয়োগের দিন সন্ধ্যায় বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার তখন চাকরির মেয়াদ ছিল আরও ১০ মাস।

SHARE