বিদ্যুৎ প্রবাহ রয়েছে এমন খোলা তার বা বৈদ্যুতিক লাইনের সংস্পর্শে এলে শরীর বিদ্যুতায়ন হতে পারে। অধিকাংশ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে অসতর্কতা থেকে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট জীবন পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে।
তাই ইলেকট্রিক দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানা থাকা খুব জরুরি। একটু সচেতনতা অনেক সময় অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে আপনাকে বা আপনার প্রিয়জনকে।
যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন
# যে কোনো বৈদ্যুতিক কাজ করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে সেখানে সংযোগ আছে কি না।
# খালি পায়ে মাটিতে বা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বৈদ্যুতিক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
# হাই ভোল্টেজ লাইনে কাজ করার আগে লাইনকে নিউট্রাল করে নিতে হবে।
# ফ্যানের ক্যাপাসিটর ডিসচার্জ না করে স্পর্শ করা উচিত নয়।
# বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকা আবস্থায় কোনো ক্রমেই বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ (দূরদর্শন, মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি) মেরামত করতে যাওয়া উচিত নয়।
# রেফ্রিজারেটরের রং উঠে যাওয়া জায়গা স্পর্শ করা উচিত নয়।
# ইস্ত্রি ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে এটি বিদ্যুতায়িত হয়নি।
# যে কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার আগে সুইচ বন্ধ করে নিতে হবে। ইত্যাদি কাজ মোটামুটি ভাবে আপনাকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাৎক্ষণিক করণীয়
# উত্তেজিত হওয়া যাবে না, কেননা উত্তেজনাবশত আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে আপনারও বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখা যায় না। এজন্য ভারি সেন্ডেল পায়ে শুকনা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সেটা সরিয়ে দিন। বিদ্যুতায়িত অবস্থায় সরাসরি তাকে ধরতে যাবেন না। না হলে আপনিও বিপদে পড়তে পারেন।
# বৈদ্যুতিক সুইচ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে।
# সুইচ বন্ধ করা সম্ভব না হলে শুকনো খবরের কাগজ, উলের কাপড়, শুকনো কাঠের টুকরো অথবা রাবার দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তিকে বৈদ্যুতিক উৎস হতে ধাক্কা মেরে আলাদা করতে হবে।
# ধাক্কা দেয়া বা সুইচ বন্ধ করা সম্ভব না হলে দ্রুত বিদ্যুৎ অফিসে খবর দিতে হবে।
# বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির শরীর (বুক, পিঠ, হাত-পায়ের তালু, ঘাড় ইত্যাদি) মালিস করলে রক্ত চলাচলে সহায়তা হয়।
# বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির গলা, বুক এবং কোমরের কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে। দ্রুত তাকে বালিশ ছাড়া মাটিতে শুইয়ে দিন। এতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যাবে।
# মুখ, নাকে কোনো ময়লা, থু থু আছে কিনা বা জিহ্বা উল্টে গেছে কিনা দেখে নিন। থাকলে হাতের কাছে যাই পান (কাপড়) দিয়ে পরিস্কার করে দিন, জিহ্বা উল্টে থাকলে মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তা সোজা করে দিন। এরপর দুই চোয়ালের মাঝে দুই দিকে চাপ দিয়ে মুখ খোলা অবস্থায় মুখে মুখ লাগিয়ে ফুঁ দিতে থাকুন (আর্টিফিসিয়াল ব্রিদিং, মাউথ টু মাউথ)। প্রতি মিনিটে আনুমানিক ২০ বার।
# বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির হৃদপিণ্ড সঞ্চলন বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে হলে দ্রুত তার বুকের উপর জোরে জোরে চাপ দিতে হবে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় (CPR)।
# বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে কৃত্রিমভাবে শ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যতক্ষণ না হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত।
# রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করত হবে।
যা করা যাবে না
# আক্রান্ত ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে প্রহার করা যাবে না।
# বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করেই ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করার চেষ্টা করা যাবে না।