আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে জয়ের অনীহা কেন? (ভিডিওসহ)

সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তিবিদ হিসেবেই তিনি এখনও সমধিক পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সন্তান আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাল ধরছেন এমন কথা প্রায় দেড় যুগ ধরে শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের তরুণ, মধ্যবয়সি ও তৃণমূল নেতাদের কাছে জয়ের গ্রহণযোগ্যতা দৃশ্যমান। বিগত দুটি কাউন্সিলে তরুণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে জয়কে নেতৃত্বে আনার দাবিও ওঠে। শেষ পর্যন্ত সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। জয় এখনই নেতৃত্ব নিতে অনাগ্রহী, এ কারণেই তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়নি। এমনটিই শোনা যায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে।

বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর সময় মোরারজি দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো, তার মেয়ে বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততাও এসেছিল পারিবারিক রাজনীতির ধারায়। শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েকে পরিবারও রাজনৈতিক উত্তরসূরী তৈরি করেছে।

ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন।

পঁচাত্তর পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, আবদুস সামাদ আজাদ, আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমুর মতো তারকা নেতারা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান।

সেই ধারাবাহিকতায় জয়ও আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন এমন প্রত্যাশা দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মীর। জয়ের মা শেখ হাসিনা গত দুটি কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আর না থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সে হিসেবে জয়ই দলের কাণ্ডারি হবেন এমনটি চাওয়া অনেকের।

তবে শোনা যায় সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে খুব একটা আগ্রহী নন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিগত কাউন্সিলের আগে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই দলের ভার নিতে আগ্রহী নন। তিনি যেভাবে আছেন আপাতত সেভাবেই থাকতে চান।

সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, জয়ের ইচ্ছার ব্যাপারও আছে। এ ব্যাপারে নেত্রীকে কিছু বললে তিনি বলেন, জয় তো রাজনীতিতে আসতে চায় না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি বারবারই নেত্রীকে বলে আসছি যে, জয়কে গ্রুমিং করতে হবে। এটা নেত্রীর সিদ্ধান্তের ব্যাপার। জয়ের নিজেরও ইচ্ছার ব্যাপার আছে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জয়কে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের কোনো পদে আসতে চান না।

এদিকে কাছ থেকে যারা সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেখেছেন তারা বলেছেন, জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচণ্ডতা। রয়েছে পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তা। তার রয়েছে নেতৃত্বগুন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। ভাষণ দেয়ার সময় তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এদেশের আইসিটি সেক্টরকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন। রাজনীতিতে জয় এলে সহজেই সবার মন জিতে নেবেন।

২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলেকে নেতৃত্বে নিয়ে আসার দাবি জানান। শেখ হাসিনা তাতে সাড়া দেননি।

সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ নেন। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর তিনি পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য হন।

তিনি ২০১৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন।

এর আগে আওয়ামী লীগের বিগত মেয়াদের সরকারে ২০১৪ সালেও প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন

SHARE